অস্ট্রেলিয়ার রিজার্ভ ব্যাংক (RBA) মে মাসের বৈঠকে প্রত্যাশিত পদক্ষেপ অনুসরণ করে সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে। তবে, সামগ্রিকভাবে মার্কিন ডলারের দরপতনের কারণে AUD/USD পেয়ারের বিক্রেতারা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন।
মে মাসের বৈঠকের শেষে, অস্ট্রেলিয়ার রিজার্ভ ব্যাংক সবচেয়ে প্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে, ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে সুদের হার 4.10% থেকে 3.85%-এ নিয়ে আসে। ফেব্রুয়ারিতে মুদ্রানীতি নমনীয় করার সূচনা করার পর বর্তমানে দ্বিতীয়বারের মতো সুদের হার কমানো হল।
এ কথা বলা যাবে না যে মে মাসের বৈঠকের ফলাফল পূর্বনির্ধারিত ছিল। যদিও বেশিরভাগ বিশ্লেষকই সুদের ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর পূর্বাভাস দিয়েছিলেন—যেহেতু CPI বা ভোক্তা মূল্য সূচক প্রথমবারের মতো ২০২১ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের পর লক্ষ্যমাত্রায় ফিরেছে—তবুও সবাই একমত ছিলেন না যে রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া ডোভিশ বা নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করবে, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার শ্রমবাজারের কঠোর অবস্থান বিবেচনায়।
এপ্রিলের প্রতিবেদনে প্রায় ৯০,০০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে, যা মার্চে ৩৬,০০০ ছিল। এই শক্তিশালী বৃদ্ধি এমপ্লয়মেন্ট-টু-পপুলেশন রেশিও 64.4%-এ উন্নীত করে, যা জানুয়ারির রেকর্ড 64.5%-এর কাছাকাছি। রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার কর্মকর্তারা (বিশেষত ডেপুটি গভর্নর অ্যান্ড্রু হাউসার) একাধিকবার বলেছেন, শ্রমবাজারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি "মূল্যস্ফীতির জন্য চ্যালেঞ্জ" তৈরি করে। পাশাপাশি, সর্বশেষ মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদনে মিশ্র ফলাফল পরিলক্ষিত হয়েছে—চতুর্থ প্রান্তিকে হেডলাইন CPI 0.9% বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে পূর্ববর্তী দুটি প্রান্তিকে তা 0.2% ছিল।
তবুও, রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া পরিস্থিতিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে এবং দেশটির জাতীয় মুদ্রার উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ব্যাংকটির প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, গত মাসের প্রতিবেদনে "এটি প্রমাণিত হয়েছে যে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাচ্ছে এবং মুদ্রাস্ফীতিজনিত ঝুঁকিগুলো এখন অনেক বেশি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।"
রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার গভর্নর মিশেল বুলক বৈঠকের পর অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে একই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন। তার মতে, রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার বোর্ড অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অনুসারে "প্রয়োজনে আরও নমনীয় নীতি গ্রহণে প্রস্তুত"। যদিও বক্তব্যটি কিছুটা অস্পষ্ট ছিল, তবুও ট্রেডাররা এটিকে পরবর্তী মুদ্রানীতির নমনীয়করণের ইঙ্গিত হিসেবেই দেখেছে।
বুলক আরও বলেন, সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর কারণে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পেয়েছে। এখানে স্পষ্টতই যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সাময়িক বাণিজ্য যুদ্ধবিরতির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে, যেখানে উভয় পক্ষই পারস্পারিক সম্মতির ভিত্তিতে 115% হারে শুল্ক কমিয়েছে।
সার্বিকভাবে, গভর্নর বুলকের অবস্থান স্পষ্টভাবে ডোভিশ বা নমনীয় ছিল। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আত্মবিশ্বাসী যে তারা মূল মূল্যস্ফীতিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ধরে রাখতে পারবে ("এর জন্য সব ধরনের শর্ত পূরণ হয়েছে") এবং তাই এই সুদের হার হ্রাসের সিদ্ধান্ত "একেবারেই সঠিক ও যৌক্তিক"। আরও উল্লেখযোগ্যভাবে, বুলক জানান রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার বোর্ড তিনটি সম্ভাব্য পথ বিবেচনা করেছিল: 'অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণ', ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার হ্রাস এবং ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার হ্রাসের। তবে ৫০ পয়েন্ট সুদের হার হ্রাসের পক্ষে থাকা যুক্তিগুলো "খুব বেশি শক্তিশালী ছিল না"।
ভবিষ্যতের সুদের হার কমানো প্রসঙ্গে, বুলক কার্যত সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন যে এ বছর এটিই শেষবারের মতো সুদের হার হ্রাস নয়। তিনি বলেন, "যদি মূল্যস্ফীতি কমতে থাকে", তাহলে রিজার্ভ ব্যাংক আরও ব্যবস্থা নেবে। তবে এই নমনীয়করণের মাত্রা কতটা দীর্ঘ হবে বা সুদের হার কোথায় গিয়ে স্থির হবে—তা স্পষ্ট নয়। তিনি শুধুমাত্র সাধারণ পর্যবেক্ষণে সীমাবদ্ধ থাকেন।
সুতরাং, মে মাসের বৈঠকে রিজার্ব ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে প্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং সুস্পষ্টভাবে ডোভিশ বা নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছে, যা আরও সুদের হার কমানোর সংকেত দিচ্ছে।
রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার মে মাসের বৈঠকের ফলাফলের প্রভাবে অস্ট্রেলিয়ান ডলারের দর নিম্নমুখী হয়েছে। এর পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকেও চাপ সৃষ্টি হয়, যেখানে বিরোধী জোটে ভাঙ্গন ধরেছে (ন্যাশনাল পার্টি এখন আর লিবারেল পার্টির অংশ নয়)।
এই সব ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় AUD/USD পেয়ারের মূল্য 0.65 জোনের উপরের সীমা থেকে সরে এসে 0.64 রেঞ্জের নিচের দিকে নেমে যায়, বিশেষ করে 0.6420 সাপোর্ট লেভেলের দিকে (D1 টাইমফ্রেমে বোলিঙ্গার ব্যান্ডের মধ্যবর্তী লাইন)। তবে, বিক্রেতারা মূল্যের এই সাপোর্ট লেভেলের ব্রেক ঘটিয়ে মূল্যকে নিচে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছে। যা AUD/USD বিক্রেতাদের জন্য একটি সতর্ক সংকেত—তাদের অবস্থান দুর্বল হয়েছে, যা মূলত মার্কিন ডলারের সামগ্রিক দরপতনের কারণে হয়েছে।
আমার মতে, ট্রেডাররা খুব শীঘ্রই রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া মে মাসের বৈঠকের ফলাফল মূল্যায়ন করে ফেলবে এবং মার্কিন গ্রিনব্যাকের দিকে মনোযোগ দেবে, যা এখনো বেশ কয়েকটি মৌলিক কারণে চাপের মধ্যে রয়েছে। প্রথমত, ১৯১৭ সালের পর এই প্রথমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিখুঁত ক্রেডিট রেটিং হারিয়েছে—মুডি'স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সভারিন রেটিং Aaa থেকে Aa1-এ নামিয়ে এনেছে। তিনটি প্রধান ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির মধ্যে (ফিচ, S&P) মুডি'সই সর্বশেষ যারা এখন পর্যন্ত ট্রিপল-এ রেটিং ধরে রেখেছিল। দ্বিতীয়ত, ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা দীর্ঘমেয়াদে স্থগিত থাকায় ডলারের উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, মার্কিন ডলার সূচকের দর আজ 99 পর্যন্ত নেমে এসেছে, যা মার্কিন মুদ্রার দুর্বলতা প্রতিফলিত করে।
এই গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে AUD/USD পেয়ারের লং পজিশন ওপেন করা যৌক্তিক বলে মনে হচ্ছে, কারণ বিক্রেতারা 0.6420-এর মধ্যবর্তী সাপোর্ট লেভেল পর্যন্ত ব্রেক ঘটাতেও ব্যর্থ হয়েছে। ঊর্ধ্বমুখী মুভমেন্টের লক্ষ্যমাত্রা রয়ে গেছে 0.6490 (দৈনিক চার্টে বোলিঙ্গার ব্যান্ডের আপার লাইন)। এই রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেকআউট করে মূল্য উপরের দিকে গেলে ক্রেতাদের পক্ষে মূল্যকে 0.65 জোনে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উন্মুক্ত হবে।