এ সপ্তাহের অর্থনৈতিক ক্যালেন্ডার গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে ভরপুর রয়েছে। প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে EUR/USD পেয়ারের ট্রেডারদের জন্য ঐতিহ্যগতভাবে সবচেয়ে বেশি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়ে থাকে, এবং জুনও এর ব্যতিক্রম হবে না। ক্যালেন্ডারে মার্কিন ISM সূচক, ইউরোজোনের মুদ্রাস্ফীতির প্রতিবেদন, এবং গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন শ্রমবাজার সংক্রান্ত প্রতিবেদনের প্রকাশনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অতিরিক্ত হিসেবে রয়েছে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ECB) জুন মাসের বৈঠক। অর্থাৎ, আসন্ন সপ্তাহটি বেশ ঘটনাবহুল, তথ্যসমৃদ্ধ এবং অত্যন্ত অস্থিরতা হবে বলে মনে হচ্ছে।
সোমবার
সোমবার ইউরোপীয় সেশনে মে মাসের চূড়ান্ত PMI প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, চূড়ান্ত অনুমানের ফলাফল প্রাথমিক অনুমানের সঙ্গে মিলবে বলে আশা করা হচ্ছে, তাই ট্রেডাররা সম্ভবত এই প্রতিবেদন উপেক্ষা করবে।
তবে, মার্কিন সেশনের প্রতিবেদনগুলো সম্ভবত মার্কেটে অস্থিরতার মাত্রা বাড়াবে। বিশেষ করে, মে মাসের ISM ম্যানুফ্যাকচারিং সূচক প্রকাশিত হবে। এই সূচক টানা চার মাস ধরে কমেছে এবং গত দুই মাস ধরে সংকোচন অঞ্চলে (৫০ পয়েন্টের নিচে) অবস্থান করছে। বিশ্লেষকেরা মে মাসে সূচকটি সামান্য বেড়ে ৪৯.৩-তে পৌঁছাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন। যদি প্রত্যাশার বিপরীতে সূচকটি ৫০-এর ওপরে উঠে যায়, তাহলে ডলার উল্লেখযোগ্য সহায়তা পাবে।
মার্কিন সেশনে ফেডারেল রিজার্ভের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও বক্তব্য দেবেন: ডালাস ফেডের প্রেসিডেন্ট লরি লোগান (এই বছর ভোটাধিকার নেই), শিকাগো ফেডের প্রেসিডেন্ট অস্টান গুলসবি (ভোটাধিকার প্রাপ্ত সদস্য), এবং ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের বক্তব্য অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গলবার
দিনের প্রথমার্ধে ইউরোজোনের গুরুত্বপূর্ণ মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। এই অঞ্চলের সামগ্রিক ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) দুই মাস ২.২%-এ থাকার পর বার্ষিক ভিত্তিতে কমে ২.০%-এ নেমে আসবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। জ্বালানি ও খাদ্য মূল্য বাদ দিয়ে মূল CPI-ও ২.৭% থেকে কমে ২.৪%-এ নামবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এমন ফলাফল জুনের বৈঠকে ইসিবি কর্তৃক আরেকবার সুদের হার হ্রাসের সম্ভাবনাকে সমর্থন করবে।
তবে, এটা মনে রাখা জরুরি যে জুনে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার হ্রাস ইতোমধ্যে মার্কেটে মূল্যায়িত হয়েছে। তাই মে মাসের মুদ্রাস্ফীতি কমে গেলে সেটির প্রভাব মার্কেটে পড়বে না, যদি না মুদ্রাস্ফীতি অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যায়—সেক্ষেত্রে EUR/USD পেয়ারের ক্রেতারা উল্লেখযোগ্য অনুপ্রেরণা পেতে পারে।
মার্কিন সেশনে এপ্রিল মাসের JOLTs থেকে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। গত মাসে এই প্রতিবেদনের ফলাফল ৭.১৯ মিলিয়ন এসেছিল (৭.৪৯ মিলিয়নের পূর্বাভাসের তুলনায় কম), যা টানা দুই মাস ধরে পতন নির্দেশ করছে। বিশ্লেষকেরা এই ফলাফল আরও একবার হ্রাস পেয়ে ৭.০৩ মিলিয়ন হবে বলে আশা করছেন। যদিও এই সূচকটি বেশ দেরিতে প্রকাশিত হবে, তবুও এটি ডলারের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি জোরদার করতে পারে।
বুধবার
বুধবার ADP থেকে মার্কিন শ্রমবাজার সংক্রান্ত আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে, যা অফিশিয়াল ননফার্ম পেরোল প্রতিবেদনের পূর্বাভাস হিসেবে বিবেচিত হয়। পূর্বাভাস অনুযায়ী মে মাসে মাত্র ১১০,০০০ কর্মসংস্থান বাড়বে, যা দুর্বল ফলাফল এবং ননফার্ম প্রতিবেদনের জন্য ভালো সংকেত নয়, যদিও দুটি প্রতিবেদনের ফলাফল সবসময় সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। গত মাসে ADP-র প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছিল কর্মসংস্থান ৬২,০০০ বেড়েছে, আর ননফার্ম পেরোল প্রতিবেদন কর্মসংস্থান +১৭৭,০০০ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
এদিন ISM থেকে পরিষেবা সংক্রান্ত PMI-ও প্রকাশিত হবে। এটি মে মাসে এপ্রিলের ৫১.৬ থেকে বেড়ে ৫২.০-তে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ডলারের ক্রেতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো সূচকটি যেন ৫০-এর ওপরে থাকে।
এদিন ফেডের প্রধান বক্তাদের মধ্যে রয়েছেন আটলান্টা ফেডের প্রেসিডেন্ট রাফায়েল বোস্টিক (যার এই বছর ভোটাধিকার নেই) এবং ফেড গভর্নর লিসা কুক (ভোটাধিকার প্রাপ্ত সদস্য)।
বৃহস্পতিবার
বৃহস্পতিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট হলো ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জুন মাসের বৈঠক সভা। সম্ভাব্য দৃশ্যপট অনুযায়ী, সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট হ্রাস করা হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে ইসিবির। ফ্রাঁসোয়া ভিলেরোই ডি গালো, পিয়েরে উঁশ, এবং মারিও সেন্তেনোর মত কর্মকর্তাদের পূর্ববর্তী বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্ত মার্কেটে ইতোমধ্যেই মূল্যায়িত হয়েছে। তাই ইসিবির বিবৃতি ও ক্রিস্টিন লাগার্দের বক্তব্যের দিকে দৃষ্টি থাকবে।
"হকিশ বা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেও সুদের হার হ্রাসের" সম্ভাবনা রয়েছে—ইসিবি সুদের হার কমালেও হকিশ বা কঠোর অবস্থান গ্রহন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রেসিডেন্ট ফাবিও পানেত্তা সম্প্রতি বলেছেন ইসিবির সুদের হার কমানোর সুযোগ "সীমিত", এবং তিনি বাস্তববাদী ও নমনীয় পন্থা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন। ইসিবি যদি এমন সংকেত দেয়, তাহলে ইউরো উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী হতে পারে।
বৃহস্পতিবার ফেডের বক্তাদের মধ্যে রয়েছেন গভর্নর অ্যাড্রিয়ানা কুগলার এবং ফিলাডেলফিয়া ফেড প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিক হার্কার (যিনি শীঘ্রই অবসর নিচ্ছেন)।
শুক্রবার
শুক্রবার ট্রেডারদের দৃষ্টি মে মাসের ননফার্ম পেরোলস-এর দিকে নিবদ্ধ থাকবে। পূর্বাভাস অনুযায়ী মাত্র ১৩০,০০০ কর্মসংস্থান বাড়বে, যেখানে এপ্রিল মাসে ১৭৭,০০০ বৃদ্ধি পেয়েছিল। বেকারত্বের হার ৪.২%-এ অপরিবর্তিত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং গড় ঘন্টা মজুরি বৃদ্ধির হার কমে ৩.৮%-এ নামবে। লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেট ৬২.৫%-এ কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যদি ননফার্ম পেরোল প্রতিবেদনের ফলাফল পূর্বাভাস অনুযায়ী বা এর নিচে আসে, তাহলে ডলার আবারও চাপের মধ্যে পড়বে।
উপসংহার
জুনের প্রথম সপ্তাহে বেশ অনেকগুলো প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে এবং বেশ উচ্চমাত্রার অস্থিরতা বিরাজ করবে বলে প্রতিশ্রুতি পাওয়া যাচ্ছে। ISM সূচক এবং ননফার্ম পেরোল প্রতিবেদনের প্রতি ডলারের ট্রেডাররা প্রতিক্রিয়া দেখাবে, এবং ইউরোর ট্রেডাররা মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদন ও ইসিবির বৈঠকের সভার ফলাফলের ওপর প্রতিক্রিয়া দেখাবে। এছাড়াও, ট্রেডাররা মার্কিন-চীন এবং মার্কিন-ইইউ বাণিজ্য আলোচনার খবরের ওপর ঘনিষ্ঠ নজর রাখবে। গত শুক্রবার, ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে কৌশলগত কাঁচামালের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহারের চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন, যার ফলে আলোচনা স্থগিত হয়ে যায়। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চীন অভিযোগ তোলে যে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়াকে "বারুদের স্তুপে" পরিণত করছে এবং পেন্টাগন প্রধান পিটার হেগসেথের "ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে হুমকি" মন্তব্যের নিন্দা জানায়।
যদি এই দুই পরাশক্তির মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়ে, তাহলে ISM বা ননফার্ম পেরোল প্রতিবেদন থেকে সমর্থন পেলেও ডলার তীব্র চাপের মুখে পড়বে। আমার বিশ্বাস ডলার এখনও দুর্বল অবস্থায় রয়েছে, তাই EUR/USD-র যেকোনো দরপতনকে লং পজিশন ওপেন করা সুযোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে। ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার ক্ষেত্রে প্রথম (এবং প্রধান) লক্ষ্যমাত্রা থাকবে 1.1430-এর লেভেল—যা D1 টাইমফ্রেমে বলিঙ্গার ব্যান্ডের ঊর্ধ্বসীমা।