গত সপ্তাহের শেষ দিনের ট্রেডিং অনিশ্চয়তার মধ্যেই শেষ হয়। মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক উত্তেজনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শুক্রবার EUR/USD পেয়ার তীব্র দরপতনের শিকার হয় এবং 1.1632-এর বহু বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লেভেল থেকে নিম্নমুখী হয়। তবে মার্কিন সেশন শেষ হওয়ার আগে বিয়ারিশ প্রবণতার চাপ হ্রাস পায় এবং ক্রেতারা ধীরে ধীরে অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে শুরু করে। বলা যায়, মার্কেট মাঝপথে স্থবির হয়ে গেছে—ট্রেডাররা ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর প্রভাব পুরোপুরিভাবে বিশ্লেষণ করে উঠতে পারেনি। প্রাথমিকভাবে ডলারের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছিল, তবে তা দ্রুতই দুর্বল হয়ে যায়। শুক্রবারের শেষে ডলার সূচক 98.00 লেভেলের কাছাকাছি থাকা অবস্থায় লেনদেন শেষ হয়, যদিও দিনের শুরুতে ডলার সূচকের দর 98.58-এর স্থানীয় উচ্চতায় পৌঁছেছিল। EUR/USD পেয়ারের মূল্যের মুভমেন্ট একই প্রতিচ্ছবি পরিলক্ষিত হয়েছে—সপ্তাহ শেষে এই পেয়ারের মূল্য 1.1551 লেভেলে থাকা অবস্থায় ট্রেডিং শেষ হয়।

নিঃসন্দেহে, মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক সংঘাত সামগ্রিকভাবে মার্কেট এবং EUR/USD পেয়ারের ওপর প্রভাব ফেলবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমিত হয়, তবে ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ায় EUR/USD পেয়ারের ক্রেতারা উপকৃত হবে। এর বিপরীতে, যদি সংঘাত আরও ছড়িয়ে পড়ে (যেমন—ইরান হরমুজ প্রণালী অবরোধ করে অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হানে), তবে EUR/USD পেয়ারের ট্রেডাররা সতর্ক অবস্থানে থাকবে এবং এই পেয়ারের দর 1.14–1.15 রেঞ্জের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারে।
বর্তমানে, ইরান ও ইসরায়েল একে অপরের উপর মিসাইল হামলা চালিয়েই যাচ্ছে। তবে উত্তেজনা নিরসনের কিছু ইঙ্গিতও দেখা যাচ্ছে। যেমন—ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জানিয়েছেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র থাকবে না এমন একটি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত। পাশাপাশি, তেহরান ঘোষণা দিয়েছে যে, যদি ইসরায়েলের হামলা বন্ধ হয়, তবে তারাও হামলা বন্ধ করবে।
একদিকে এটি শান্তির ইঙ্গিত দেয়, তবে অন্যদিকে একটি জটিলতা রয়েছে—কারণ ইসরায়েলের হামলার আগেই তেহরান বলেছিল, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না, কিন্তু তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতেও রাজি নয়। ইরান শান্তিপূর্ণ জ্বালানি উৎপাদনের জন্য সম্পূর্ণ নিউক্লিয়ার ফুয়েল সাইকেল বজায় রাখতে চায়। এমনকি আরাকচি উল্লেখ করেছেন যে, কোনো পারমাণবিক চুক্তিই "ইরানকে তার পারমাণবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারবে না।"
অন্যদিকে, ইরানের প্রতিপক্ষ—বিশেষ করে ইসরায়েল—এখনো মনে করে যে ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে।
তাই ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যে তাৎক্ষণিকভাবে উত্তেজনা প্রশমনের সম্ভাবনা কম। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতে, IDF যুদ্ধবিমানগুলো ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ও অস্ত্র ব্যবস্থার ক্ষয়ক্ষতি সাধনের প্রচেষ্টায় আঘাত অব্যাহত রাখবে।
তবুও কূটনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনাই পুরোপুরি বাতিল করা যাচ্ছে না—বিশেষ করে এখন যখন ইরানের অবস্থানে কিছুটা নমনীয়তা দেখা যাচ্ছে। ইসরায়েলের হামলার পর তেহরান একাধিকবার বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা এখন অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু সাম্প্রতিক মন্তব্যগুলো সেই অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। একই সময়ে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে একটি চুক্তির জন্য চাপ দিচ্ছেন, আবার একই সঙ্গে হুমকি দিচ্ছেন—যদি ইরান যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আঘাত হানে, তাহলে তিনি "পূর্ণ শক্তি" দিয়ে তার জবাব দেবেন।
অর্থাৎ, মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাতের ফলাফল এখনো অনিশ্চিত এবং যেকোনো মোড় ঘন ঘন EUR/USD-এর মূল্যের অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
অন্য সব মৌলিক প্রভাবক পেছনের সারিতে চলে যাবে—শুধুমাত্র FOMC-এর জুন মাসের বৈঠক এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম, যার ফলাফল বুধবার প্রকাশিত হবে।
বেশিরভাগ বিশ্লেষক মনে করেন, ফেডারেল রিজার্ভ তাদের সকল আর্থিক নীতিমালা অপরিবর্তিত রাখবে। CME ফেডওয়াচ টুল অনুসারে, এই সম্ভাবনার হার 99.6%। তাই ট্রেডারদের পুরো মনোযোগ ফেডের প্রতিনিধিদের বিবৃতি এবং ফেডের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলের বক্তব্যের দিকে কেন্দ্রীভূত হবে।
বিশেষত ট্রেডাররা আগ্রহ নিয়ে সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচক নিয়ে ফেডের মূল্যায়ন খতিয়ে দেখবে। যেমন—মার্কিন শ্রম বাজার সংক্রান্ত মোটামুটি ইতিবাচক ফলাফল পরিলক্ষিত হয়েছে, যদিও চমকপ্রদ কিছু ছিল না: দেশটির বেকারত্বের হার 4.2%-এ স্থির ছিল এবং নন-ফার্ম পেরোলের সংখ্যা 139K বেড়েছে (এপ্রিল মাসে ছিল 147K)। অন্যান্য প্রতিবেদনের ফলাফল মিশ্র ছিল: ম্যানুফ্যাকচারিং এবং সার্ভিসেস ISM সূচক সংকোচনের অঞ্চলে চলে গেছে। মুদ্রাস্ফীতি প্রতিবেদনের ফলাফল দ্বৈত ধরণের ছিল: হেডলাইন CPI এবং PPI বেড়েছে, কিন্তু কোর CPI অপরিবর্তিত ছিল এবং কোর PPI 3.0%-এ কমে এসেছে। এদিকে, ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান কর্তৃক প্রকাশিত মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশা এখনো 5.1%-এ রয়েছে, যা ফেডের 2%-এর লক্ষ্যমাত্রার অনেক উপরে অবস্থান করছে।
নিঃসন্দেহে, ফেডের জুন মাসের বৈঠকের ফলাফল EUR/USD-এর মূল্যের উল্লেখযোগ্য অস্থিরতা সৃষ্টি করবে—বিশেষ করে যদি পাওয়েল স্ট্যাগফ্লেশন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, কারণ CPI/PPI বাড়ছে অথচ ISM সূচকে সংকোচন দেখা যাচ্ছে। একই সময়ে, চীনের সঙ্গে ঘোষিত বাণিজ্য চুক্তি চলমান থাকা সত্ত্বেও চীনা পণ্যের ওপর 55% শুল্ক বজায় থাকছে। তবে, যদি ফেড ইতিবাচক অবস্থান বজায় রাখে এবং মূল মুদ্রাস্ফীতির স্থিতিশীলতা ও কোর PPI-এর মন্থরতার বিষয়টি তুলে ধরে, তবে ডলার কিছুটা সহায়তা পেতে পারে।
এ সপ্তাহে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে।
মঙ্গলবার, 17 জুন যুক্তরাষ্ট্রের রিটেইল সেলস ভলিউম প্রকাশিত হবে। প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, মে মাসে মোট রিটেইল সেলস 0.6%-এ হ্রাস পেতে পারে, যা এপ্রিল মাসে 0.1% বৃদ্ধি পেয়েছিল। অটোমোবাইল বিক্রি বাদ দিয়ে রিটেইল সেলস 0.2% বৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে (এপ্রিল মাসে ছিল 0.1%)।
এছাড়াও, মঙ্গলবার প্রকাশিত হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, মে মাসে সূচকটি কোনো প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে না, অর্থাৎ এপ্রিলের মতোই থাকবে। এই ফলাফল ডলারের ওপর চাপ তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে ISM ম্যানুফ্যাকচারিং সূচকের দুর্বলতা বিবেচনায়।
মঙ্গলবার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা হলো ZEW ইনডেক্স। জার্মান বিজনেস সেন্টিমেন্ট সূচক এই মাসে 34.8-এ পৌঁছাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে, যা আগের মাসে 25.2 ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সামগ্রিক ইকোনোমিক সেন্টিমেন্ট সূচক 23.5-এ পৌঁছাতে পারে, যা মে মাসে 11.6 ছিল।
ফেডের জুনের বৈঠকের পাশাপাশি, বুধবার মার্কিন বিল্ডিং পারমিট সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। এপ্রিল মাসে এই সূচক 4.7% হ্রাস পেয়েছিল, এবং মে মাসেও 5.1% হ্রাসের পূর্বাভাস রয়েছে।
শুক্রবার ট্রেডাররা ফিলাডেলফিয়া ফেডারেল রিজার্ভের ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাক্টিভিটি ইনডেক্সের দিকে মনোযোগ দেবে। যদিও এটি একটি স্বল্প গুরুত্বসম্পন্ন প্রতিবেদন, তবে এটি সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও বিস্তৃত অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারে, বিশেষ করে যদি ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোডাকশন হ্রাস পায়। জুনের সূচকটি -1.2 পয়েন্ট হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা মে মাসে -4.0 ছিল।
সারসংক্ষেপ অনুযায়ী, আগামী সপ্তাহে EUR/USD পেয়ারের ট্রেডারদের জন্য মূল আলোচ্য বিষয় হলো মধ্যপ্রাচ্যের সামরিক সংঘাত এবং ফেডের জুনের বৈঠক। অন্যান্য মৌলিক প্রভাবক গৌণ হলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শুক্রবার EUR/USD পেয়ারের মূল্য 1.1490 (D1 টাইমফ্রেমে টেনকান-সেন) ইন্টারমিডিয়েট সাপোর্ট ব্রেক করার চেষ্টা করেছিল, তবে সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়—মূল্য 1.1551 এর লেভেলে থাকা অবস্থায় সেশন শেষ হয়, যা দৈনিক চার্টে আপার বলিঞ্জার ব্যান্ড এবং সব ইচিমোকু লাইনের ওপরে অবস্থান করছে। এটি বুলিশ প্রবণতার সম্ভাবনাকে সমর্থন করে। যদি সোমবার এই পেয়ারের ক্রেতারা মূল্যকে 1.15 লেভেলের ওপরে রাখতে পারে, তাহলে 1.1600 (H4 টাইমফ্রেমে আপার বলিঞ্জার ব্যান্ড) এবং 1.1650 (W1 টাইমফ্রেমে আপার বলিঞ্জার ব্যান্ড) টার্গেটে লং পজিশন ওপেন করা যেতে পারে।